রবীন্দ্রপ্রতিভার দর্পণে আশরাফ আলী থানবি রহ.-এর মূল্যায়ন। ইতিহাস
বলতে চাচ্ছিলাম আশরাফ আলী থানবী (রহ:) এর কথা যিনি ভারতবর্ষের ইসলামি সাহিত্যেকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। অথচ আমরা ঠিকঠাক তার নামটা পর্যন্ত জানিনা। আফসোস!!
বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের যে অবস্থান, ভারবর্ষের ইসলামি সাহিত্যে মাওলানা আশরাফ আলী থানবি রহ.-এর অবস্থান ঠিক তেমন, কিংবা তার চেয়েও অনেক উপরে। লেখনির বিচারেও থানবি রহ. এগিয়ে রবীন্দ্রনাথের চেয়ে। রবীন্দ্রনাথের প্রকাশিত-অপ্রকাশিত যাবতীয় রচনা প্রকাশিত হয়েছে ৩২ খণ্ডে। অথচ থানবি রহ.-এর কেবল ৪০০টি বিরল প্রবন্ধ সংকলিত হয়েছে ৩৪ খণ্ডে আর সমগ্র রচনাবলীকে সংকলন করা হয়েছে ১১১ খণ্ডে।
রবীন্দ্রনাথ ও থানবি রহ. সমসাময়িক ছিলেন। হায়াতও পেয়েছিলেন প্রায় সমান। থানবি রহ. জন্মেছিলেন ১৮৬২ সালে, আর রবীন্দ্রনাথ ঠিক এক বছর আগে, ১৮৬১ সালে। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু ১৯৪১ সালে, থানভী রহ. মৃত্যুবরণ করেন দুই বছর পরে, ১৯৪৩ সালে। এই হিসেবে থানবি রহ. বেঁচে ছিলেন ৮১ বছর, রবীন্দ্রনাথ এক বছর কম, ঠিক ৮০ বছর।
কবিতা, গান, ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক— সাহিত্যের সকল শাখায় অবদান রাখার জন্য স্যেকুলার মহলে রবীন্দ্রনাথ এক দানবীয় প্রতিভার নাম। তার এই বিরাট প্রতিভা অস্বীকার করে না শত্রু-মিত্র কেউই, বরং কেউ কেউ রীতিমত পূজা করে। যেকোন ইস্যুতে রবীন্দ্রনাথকে না টানলে চলে না স্যেকুলার বাঙালি চিন্তকদের। অথচ থানবি রহ.-এর ক্ষেত্রে উল্টো চিত্র দেখা যায়। তাঁর এই বিরাট প্রতিভার মর্যাদা প্রদান করা দূরে থাক, স্বীকৃতি পর্যন্ত নেই 'আম ইসলামি' অঙ্গণে। কারও কারও তো তাঁকে মুসলিম স্বীকার করতে গিয়েও অনেক ভাবতে হয়!
তাফসির, ফিকহ, হাদিস, উসুলুত তাফসির, উসুলুল ফিকহ, উলুমুল হাদিস, বালাগাহসহ উলুমুল ইসলামির প্রায় প্রতিটি শাখায় থানবি রহ.-এর ছিল সফল ও সরব বিচরণ। তার লেখনি ছিল তাজকিয়া-তাসাউফ থেকে শুরু করে সিয়াসাত পর্যন্ত বিস্তৃত। জ্ঞানের যে শাখায় তিনি কলম ধরেছেন, তাকে পূর্ণতায় পৌঁছে দিয়েছেন। এর চাক্ষুষ প্রমাণ হলো তাফসিরে বায়ানুল কুরআন। এ গ্রন্থটির মর্ম কেবল তারাই বুঝতে সক্ষম, অনেকগুলো তাফসির গ্রন্থকে সামনে রেখে যারা কম্প্যারেটিভ স্টাডি করেছে। বায়ানুল কুরআন যেন পূর্ববর্তী সকল তাফসির গ্রন্থের নির্যাস।
থানবির পরে ভারতবর্ষকে নানামুখী ইসলামি জ্ঞান-গবেষণা দিয়ে পূর্ণ করেছিলেন যারা, তাদের কেউই থানবিকে অতিক্রম করতে পারেননি। মাওলানা মওদুদীর রাষ্ট্রচিন্তা, মাওলানা আজাদের দর্শনভাবনা কিংবা সাইয়িদ আলী নদভির বিপুল রচনা সম্ভার—সবই থানবির কাছে ঋণী। এসব থানবির চিন্তারই প্রতিধ্বনি।থানবির রচনায় সকলই খুঁজে পাওয়া যায়। প্রায় একশো বছর আগে তিনি বিজ্ঞান নিয়ে লিখেছেন, নাস্তিক্যবাদের জবাব দিয়েছেন। ইসলামি বিধিবিধানের বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা পেশ করে লিখেছেন 'আহকামে ইসলাম আকল নি নজর ম্যে' এর মত গ্রন্থ। তার লেখা চিঠিপত্র, মাওয়ায়েজ ও পরিবার সম্পর্কিত রচনাগুলো পাঠ করলে বুঝা যায় মানবপ্রকৃতি এবং ইসলামের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম দর্শন সম্পর্কে কি গভীর পান্ডিত্ব ছিল তাঁর। দুঃখের বিষয়, মানুষ তাকে চিনিছে কেবল বেহেশতি জেওর দিয়ে, অথচ এ গ্রন্থটি তাঁর লেখাই নয়।
থানবি রহ.-কে পর্যালোচনা করা যায়, তার কোন কোন চিন্তাকে রদ করা যায়, তাঁকে অগ্রাহ্য করা যায় না কোনোভাবেই। যে তাঁকে অগ্রাহ্য করে, সে জাহিল, অথবা হিংসুক।
published by : Md.Al-Amin
কোন মন্তব্য নেই