Header Ads

Header ADS

কাজী নজরুল ইসলাম জীবনী পর্ব _১

 Mohammad Al-amin Hossain

কাজী নজরুল ইসলামের জীবনী:

দুখু মিয়ার যত দুঃখ---

অনেক দুঃখে পাওয়া সন্তান বলে ছোটবেলায় তার নাম রাখা হয়েছিলো দুখু মিয়া। তার জীবনের সাথেও এই নামটি অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেল। সেই ছোট্ট দুখু মিয়া বড়ো হয়ে অনেক বড় কবি হয়েছিলেন। তবে এমনটি যে হবে সে লক্ষণ দেখা গিয়েছিলো সেই ছোটবেলাতেই। তিনিই আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। 

জন্ম পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে। সালটা ছিল বাংলা ১৩০৬ এর ১১ জ্যৈষ্ঠ। তার বাবার নাম ফকির আহমদ, মায়ের নাম জাহেদা খাতুন। ফকির আহমদের ছিল তিন ছেলে আর এক মেয়ে। প্রথম সন্তানের জন্মের পর তার পরপর চারটি সন্তানের মৃত্যু হয়। এর পর নজরুলের জন্ম। অনেক দুঃখে পাওয়া সন্তান বলে নজরুলের নাম রাখা হলো দুখু মিয়া। নজরুলের জীবনের দুঃখের সাথে এই নাম অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেল। নজরুলের যখন আট বছর বয়স তখন তাঁর বাবা মারা গেলেন। এমনিতেই তাদের বাড়ির অবস্থা ভালো ছিল না তার উপর বাবা মারা যাওয়ায় ভীষণ বিপদে পড়ে গেল তার পুরো পরিবার। নজরুলের বাবা দরগায় খাদেমগিরি করতেন।

গ্রামের মসজিদে ইমামতি করতেন। পাড়ায় মিলাদ পড়াতেন। এ সব করে করে যে সামান্য পয়সা রোজগার হতো, তাই দিয়ে তাদের সংসার চলত। জমি-জায়গা তাদের কিছুই ছিল না।

বাবা মারা যাওয়ার পর কিশোর দুখু মিয়া আসানসোলের এক কয়লা খনিতে কাজ জুটিয়ে নেয়। কিন' অতটুকু ছেলে বেশি আয় করতে পারে না। যা করে তা দিয়ে সংসার চলে না। তা ছাড়া কাজ করতে গেলে তার পড়াশোনাও বন্ধ হয়ে যায়। নজরুল তাই গ্রামে এসে পাড়ার মক্তবে পড়ালেখা শুরু করে। বছর দুই পরে মক্তবের পরীক্ষায় পাসও করল সে।

নজরুল ছিল অসম্ভব মেধাবী। যে ক্লাসে পড়ত সেই ক্লাসের ছাত্রদের অনায়াসে পড়াতে পারত সে। তার হাতের লেখা যেমন সুন্দর, তেমনি সুন্দর তার পড়ার ভঙ্গি। যেমন সুন্দর করে সে বাংলা পড়ত, তেমন সুন্দর করে পড়ত আরবি। নামকরা ক্বারীরা তার আরবি পড়া শুনে অবাক হতেন। গ্রামের অশিক্ষিত লোক তাই নজরুলকে একটা খুদে পণ্ডিত ভাবলেন। আর এতে নজরুলের লাভ হলো। সে গ্রামের মক্তবের মাস্টার হয়ে গেল। সবাই ভাবল, এতে নজরুলের দুই পয়সা আয় হবে। এই আয় দিয়ে হয়তো তাদের সংসারও চলে যাবে।

বাবার সাথে থেকে থেকে নজরুল ওই বয়সে ইসলামি চালচলনটিও ভালো রপ্ত করে নিয়েছিল। নামাজ-রোজা থেকে শুরু করে আজান দেয়া সব কিছুতেই ছিল পাক্কা। গ্রামের লোকে তাই একই সাথে তাকে মসজিদের মোয়াজ্জিন আর ইমাম বানিয়ে দিল। নজরুলের বয়স তখন এগারো। যা হোক, এই কাজে নজরুলের মন ভরে না। হাজার হোক শিশু তো। দুনিয়াকে জানার তার দারুণ কৌতূহল। তার মধ্যে ছিল এক বিরাট কাব্য সঙ্গীত প্রতিভা। এক দিন নজরুলের সেই প্রতিভা বিকাশের সুযোগ এলো। তার দূর সম্পর্কের চাচা মুন্সী বজলে করিম ছিলেন গ্রাম্য কবি। তিনি বাংলার সাথে আরবি-ফারসি মিলিয়ে গজল লিখতেন। তার দেখাদেখি পদ মিলাতে গিয়ে দেখেন নজরুলও গান লিখতে পারে। নজরুলের ছিল ভীষণ পড়ার নেশা। বাংলা পড়তে শেখার সাথে সাথে পাঠ্যবই ছাড়াও নানা রকম পুঁথির বই পড়ে শেষ করল সে। রামায়ণ-মহাভারত থেকে শুরু করে জঙ্গনামা, লাইলী-মজনু, মুসলমানের সব রকম পুঁথি পড়ে সে প্রায় কণ্ঠস্থ করে ফেলল। এমন স্মৃতিশক্তি তার, একবার পড়লে আর কিছুই ভোলে না। এমন বিদ্যা নিয়ে মাত্র বারো বছর বয়সেই এক ক্ষুদে কবি হয়ে উঠল সে। চাচার মতো করে লিখে ফেলল এক গজল।

নামাজ পড়ো মিয়া

ওগো নামাজ পড়ো মিয়া

সবার সাথে জমায়েতে

মসজিদেতে গিয়া।

ক্ষুদে কবি গজলে নামাজ শিক্ষা দেয়। কিন্তু এতে যে তার সংসারের অভাব যায় না। বাড়ির সবাইকে প্রায় উপবাস থাকতে হয়। এসব আর সহ্য হয় না তার। পোষমানা জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তাই সে পাগল হয়ে ওঠে। গ্রামে ছিল এক যাত্রাগানের দল। বর্ধমান অঞ্চলে এই যাত্রা গানের নাম ছিল লেটো গান। নজরুল এই লেটো গানে যোগ দিলো। আসলে নামাজ রোজার শাসনে শিশু মানুষের মন বন্ধ থাকতে চাইত না। অথচ আল্লাহর ধ্যান করতে হলে দেহ-মন-প্রাণের মনোযোগ দরকার। কিন্তু অত অল্প বয়সে তার সে মনোযোগ আসবে কেমন করে? তাই লেটোর দলে ঢুকে আরম্ভ করল গান বাজনা।

লেটোর দলে যোগ দিয়ে নজরুলের দুই পয়সা আয় বাড়ল বটে, কিন্তু সংসার চালানোর মতো নয়। নজরুল এবার পাড়ি দিলো আসানসোল শহরে। সেখানে এক রুটির দোকানে এক টাকা বেতনের চাকরি পেল। কিন্তু তা হলেও নজরুল তো রুটির দোকানে চাকরি করার জন্য আসেনি। বিরাট এই দুনিয়ায় সে এসেছে বিরাট কিছু করতে। এক দিন হঠাৎই রফিজ উল্লাহ নামে এক দারোগার সাথে তার পরিচয় হয়ে গেল। তার বাড়ি মোমেনশাহী (ময়মনসিংহ) জেলার ত্রিশাল গ্রামে। পড়াশোনা করবে বলে নজরুল তার সাথে ত্রিশালে এলো। এখানে এসে পড়ালেখা শুরু করলেও পরিবেশের সাথে খুব বেশি দিন খাপ খাওয়াতে পারেনি। এক বছর পর ফিরে গেল বর্ধমানে। ভর্তি হলো রানীগঞ্জের সিয়ারসোল রাজ হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণীতে। এটা ১৯১৫ সালের কথা। ক্লাস টেন অব্দি এখানে পড়ল সে। কিন্তু মেট্রিক দেওয়ার আগেই বেজে উঠল যুদ্ধের দামামা। নজরুল কী আর ঘরে বসে থাকে। সে যোগ দিল লড়াইয়ে। যুদ্ধ থেকে ফিরে কবিতা রচনায় মন দিল সে। অচিরেই তুমুল জনপ্রিয় কবি হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠল সে।

বাংলাদেশের জাতীয় এই কবি মারা যান ১৯৭৬ সালের ২৯ অাগষ্ট এবং বাংলার ১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দে।








কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.